গ্র্যাজুয়েশন ভাইভা এবং 17th batch of Sociology, SUST

চোখ ভিজে আসছে বার বার। বুকের ভিতরটা হু হু করে উঠছে। সবাইকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে। হৃদয়ের এ কোন অনুভুতি আজ আমাকে এত বিষন্ন করে তুলছে? চারটি বছর কি এতই কম সময়? শুরু হতেই শেষ।

বড় হয়ে গেছি। যে চোখে থাকবে এখন জিজ্ঞাসা, জানার বিস্ময়, সুন্দর দেখার আগ্রহ, জীবনের জয়গান সে চোখে অশ্রু আজ নিজের কাছেই বেমানান লাগছে। তবুও কেন জানি বার বার মনে পড়ছে স্মৃতি, পুরানো সেই দিনের গান, আড্ডা, ক্লাশ ফাঁকি, সব কিছু-ই।

গ্র্যাজুয়েট।
 ২৭-০২-২০১৩
অনার্সের শেষ ভাইভা। সবাই অপেক্ষা করছে বিভাগীয় প্রধানের কক্ষের সামনে। টেনশনে এক একজন লাল-নীল-বেগুনী। হাতে বই খাতা। ডিপার্টমেন্টের সামনে হতে যাওয়া  সদ্য সমাজবিজ্ঞানীর ভিড়। আলোচনায় নতুন থিউরি না বের হলেও জনেক পাঁচ নিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ আলোচনা  চলছে করিডোরের এখানে সেখানে। আর আমি নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বন্ধুরা এমন সব টার্মের কথা বলছে মনে হচ্ছে আজই প্রথম শুনছি। হা হা হা...


সব সময়ের মত এবারও ক্যামেরা সাথে নিতে ভুলে যাই নি। আর আজ শেষ ভাইভা। অনেকেই হয়তো সাথে থাকবে না। তাই এই বিষয়ে প্রস্তুতি বরাবরই আমার একটু বেশি। ডিপার্টমেন্ট এ গিয়ে দেখি লাল কভাবের ২০১৩ সালের ডায়েরি দিচ্ছে। মাথায় যেহেতু ভাইভা নিয়ে টেনশন নেই তাই ডায়েরি আর ক্যামেরা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম বন্ধুদের উপর।

শুরু হল ভাইভা।
অপেক্ষা ভিতরের জন্য। একদিকে মনে ভয় আর অন্যদিকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবার আনন্দ। সব মিলিয়ে যেন উৎসবে মেতেছে সবাই।



আর তাই তো ভাইভা বোর্ড থেকে বের হবার পর সবাই ঘিরে ধরেছে কি জিজ্ঞেস করেছে জানার জন্য। যদি কমন পরে তাহলে হয়তো শেষটাও ভালো হবে।



ভালো যে হতেই হবে। প্রস্তুতি তাই বেশি বেশি। হেটে হেটে টেনশন কমিয়ে। ভাইভা যুদ্ধে জয়ী হবার। কিন্তু হতাশা তবুও পিছু ছাড়ে না। মনে হয় আমি কিছুই পারি না। সব মনে থেকেও বার বার ভুলে যাচ্ছি। সৃষ্টিকর্তা রক্ষা কর এই যাত্রায়। প্রার্থনা, আশীর্বাদ কোন কিছু-ই এই ভয়কে দূর করতে পারছে না।




বিভাগীয় প্রধানের কক্ষ থেকে বের হয়ে বিজয়ের যে হাসি, হাফ ছেড়ে বাঁচার যে শান্তি, আর পারা না পারার পরও যে অনাবিল আনন্দ মাঝে মাঝে মনে হয় এই সুখই শ্রেষ্ঠ।





ভিতরের ভয় কখনো ভাইভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যায় না। তাই তো বের হয়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে একজন আর অন্যদিকে আড়িপেতে ভিতরের কিছু জানার চেষ্টা। কারন এরপরই সে।

ভাইভা যেমনই হউক সবাই এখন গ্র্যজুয়েট। তাই তো ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করতে আমিও ভুলে যাই নি তাঁদের। ফ্রেশার'স গ্র্যজুয়েট ভাবতেই চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক।




সময় নিষ্ঠুর, বয়ে চলে আপন মনে। আর জীবন এগিয়ে যায় তারই হাত ধরে। স্মৃতির পাতায় থেকে যায় প্রিয় মুখ আর মুহুর্ত। বিদায়ের বেলায় তাই কেঁদে ঊঠে প্রিয় মুখ ছেড়ে দূরে যেতে। হয়তবা আবার দেখা হতেও পারে কিংবা নয়।


বিকেলের আলো মিলিয়ে যাচ্ছে। এক এক করে সবাই চলে গেছে। রয়ে গেছি শুধু আমি একা সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। ঘুরে ঘুরে করিডোর, ক্লাশ, নোটিশ বোর্ড সবই দেখতে লাগলাম।কোন এক শীতের সকালে জীবনের নতুন স্বপ্নে যেভাবে এসে হাজির হয়েছিলাম আজ আবার স্বপ্ন পুরনের জন্য জীবনের আরেকধাপে প্রবেশ করলাম অনার্সের শেষ ভাইভা দিয়ে।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ভালবাসি... বন্ধু তোদের ভালবোবাসি।

Comments

Popular posts from this blog

হাওরের হাওয়ায়

Could You Remember?

টেলিফোন কল