অপেক্ষা...

একা ভাল লাগছে না। অনেকক্ষন থেকেই তো অপেক্ষা করছি। আজ বুঝি সে আর আসবে না। পাঁচ টাকা করে মোট পনেরো টাকার বাদাম কিনে ফেলেছি। বাদামওয়ালা আশেপাশে ঘুরঘুর করছে আরো যদি পাঁচ টাকার বাদাম কিনে ফেলি। বহুবার বলেছি পাচটায় আসতে। সাতটায় টিউশনিতে যেতে হবে। মাসের শুরু। এখন মিস দিলে বেতন দেওয়ার সময় কেমন যেন একটা ভাব করে তাকায় মনে হয় সারামাস না পড়িয়েই বেতন নিতে আজ চলে এসেছি। এই জন্যই তো মাসের শেষ সপ্তাহে ইচ্ছে করেই চারদিন যাই আর মাসের শুরুতে সপ্তাহে ছয়দিন।
ঘড়িতে ছয়টা পনেরো। এক ঘন্টা পনেরো মিনিট হয়ে গেছে একা বসে আছি। ওর সময় আমার জন্য যদি অপেক্ষা করতে হত তাহলে পনেরো মিনিট অপেক্ষা করেই চলে যেত। আর সে কি অভিমান। সে রাগ ভাঙ্গাতে আমাকে এই রকম প্রতিবার পনেরো মিনিট আগে এসে তার জন্য অপেক্ষা করতে হত। কিন্তু আজ এত সময় নিচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না। বাসা থেকে বের হতে না পারলে অন্তঃত একটা কল তো দিত। রিক্সা খুঁজে আসতে হলেও তো আধঘন্টার বেশি সময় লাগার কথা না।
-মাম্মা আরো পাঁচ ট্যাকার বাদাম দিমু? নাকি এক্কেবারে দশ ট্যাকার লইয়া লইবেন? উনি আসলে তখন আমারে খুজলে পাইবেন না।
- দূরে গিয়া মর। যাহ সামনে থেইক্কা!
মেজাজ খারাপ করে বসে থাকার কোন মানে হয় না। তবুও খারাপ হচ্ছে আর ভাবছি আজ আর কোন কথা হবে না। ঘড়িতে সাড়ে ছয়টা। সে আর আজকে আসবে না। হেটে হেটে টিউশনিতে গেলেও পনেরো মিনিটে পৌছে যাওয়া যাবে। সে যে পথ দিয়ে আসবে সে দিক দিয়েই হেটে যাওয়া যায় স্টুডেন্টের বাসায়। শুধু দুইটা মোড় তাও এই রাস্তা থেকে দশ মিনিট পার করে। শেষ দশ মিনিটেও যদি তার সাথে দেখা হয় রিক্সায় তাহলে আজ আর টিউশনিতে যাবো না। টাকার চেয়ে এখন ভালবাসা বেশি প্রয়োজন। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
রাস্তায় প্রতিটি রিক্সার মানুষ দেখে দেখে যখন টিউশনির বাসায় পৌছে গেলাম গেইটে একটা বড় তালা ঝুলছে। মেজাজ গেলো আরো খারাপ হয়ে। মাসের আজ নয় তারিখ। প্রতিমাসেই তারা প্রথম এই দুই সপ্তাহ বাসা থেকে কোথাও গেলে ফোনে কিছু বলে না অথবা আমাকে ইচ্ছে করে ফাঁকি দিতে চায়। আমি ফাঁকি দেই মাসের শেষে কম পড়ানোর জন্য আর এরা দেয় শুরুতে দেরি করে বেতন দেয়ার জন্য। কতবার ভেবেছি এই টিউশনিটা ছেড়ে দিয়ে অন্য একটা খুজবো কিন্তু ততবারই মনে হয়েছে সামনের মাস থেকে। এই করে আট মাস হয়ে গেছে আরো যাবে। এই বাসায় আসলে মাঝে মাঝে তাকে দেখতে পাওয়া যায়। তার ছোট চাচার বাসা। চা আর বিস্কুট দিয়ে একটু গল্প করে যায় আর খুব বেশি হলে কোন এক বইয়ের ফাকে ছোট্ট একটা চিঠি। টিউশনিটা সেই জোগাড় করে দিয়েছে বলেই ছেড়ে দিচ্ছি না।
রাস্তায় এসে মনে হচ্ছে ভালবাসা আর টাকার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো একদিন। টাকা না হলে যেমন চলবে না কারন কাল বাসার মালিক এসেই বলে যাবে ভাড়া দেয়ার জন্য তেমনিভাবে হৃদয়ের শুন্যতাও তো তার ভালোবাসা ছাড়া পূরন হবে না। এই বাইশ ঘন্টার অপেক্ষায় কি করে থাকবো।
মোবাইলের ডিস্প্লে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে কয়েকদিন থেকে। ফোন শুধু আসে। চোখ থাকিতে অন্ধ হয়ে আছি। এই যন্ত্রনাও সহ্য করতে হচ্ছে তার জন্য কারন সে ঠিক করতে দিবে না। নষ্ট হয়ে নাকি ভালই হয়েছে।
-এখন তুমি আমারে একটা করে চিঠি লিখবা। কল তো আর আন্ধাভাবে দিতে পারবা না।
এই যুগে? মেইল দিলে চলবে? গুগুল বা ইয়াহু।
-উহু! যদি চিঠি দাও আমি কল দিয়া উত্তর দিব। নইলে কথা হবে না।
এটা কেমন কথা। আমি কষ্ট করে লিখবো আর তুমি ফোনে বলে দিবা? আমি কোনদিন নিজে নোট পযর্ন্ত করে পড়ি না লিখার জন্য। আর তোমার জন্য চিঠি?
এই নিয়ে তিনটি চিঠি লিখতে হয়েছে। চতুর্থ চিঠি আজ দেওয়ার কথা। কিন্তু অপেক্ষায় আজ আর দেয়া হল না। সে আসে নি। কিন্তু কেন আসে নি বুঝতে পারছি না। রাতে ফোন দিলে এই নিয়ে কি একটু রাগ করা যায় নাকি মিষ্টি করে হেসে বলবো আগামীকাল কি দুইটি চিঠিসহ আসবো নাকি একটিতেই চলবে?
-একটার ফটোকপি দিয়েছো কেনো?
দুইবার তো আর তোমার সাথে দেখা হয় নি। গতকাল আর আজকে মিলে একবার দেখা আর তাই একটার দুইটা।
কাগজ কলম সাথে থাকবেই। অন্য মেয়েদের থাকে মেকাপ বক্স আর তার ব্যাগে কাগজ কলম। তখনি একটা কাগজে ছোট্ট করে ভালবাসি লিখে জমা দিতে হবে। আমিও চাইলে বলবে অপেক্ষা কর।
এই অপেক্ষা চলে সব সময়ই...

Comments

Popular posts from this blog

হাওরের হাওয়ায়

Could You Remember?

টেলিফোন কল