Posts

হাওরের হাওয়ায়

  হেমন্তের শুরু। হাওরের পানি কমতে শুরু করেছে। এরপরও দিগন্ত বিস্তৃত পানি। সকাল সাতটা ছত্রিশ। রাস্তার শেষে একটি বাজার এসে গাড়ি থেমে গেল। বালুখালি বাজার। কিশোরগঞ্জ থেকে মাত্র প্রায় ২২ কিমি দুরে। খুব একটা মানুষের ভীড় নেই কিন্তু নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ চারদিক যেন একটা ব্যস্ত পরিবেশ বানিয়ে ফেলেছে। মাঝিদেরও হাক ডাক শুনেই বুঝা যাচ্ছে হাওরের আমন্ত্রন। কে বা কার আগে অতিথিকে নৌকায় উঠাতে পারে এক প্রতিযোগীতা। দুইপাশের দোকান ঘর খুব বেশী একটা নেই। সব মিলিয়ে বিশ থেকে ত্রিশটা হবে। অধিকাংশ দোকান টিন আর বাঁশের। কেটলি থেকে চায়ের ধোঁয়া উঠছে আবার অনেক দোকানিরা সকালের আড়মোড় ভেঙে দোকানের ঝাপি খুলছে। দিনের হৈচৈ এখনো তোড়জোড়ে শুরু হয়নি কিন্তু ঘাটের সারি করে বেধে রাখা নৌকাগুলো ঘাট ছেড়ে ছুটে যাচ্ছে হাওরের বুকে। কিছু এসে ঘাটে নোঙর ফেলছে। মালবোঝাই বুলগেট, ট্রলার পাশ কাটিয়ে ছুটে চলছে অন্য গন্তব্যে। কিশোরগঞ্জ জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার মধ্যে পর্যটক আকষর্ন করে এমন হচ্ছে মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম এবং নিকলি। কারন এই উপজেলাগুলো মূলত হাওর বেষ্টিত। হাওরের সৌন্দর্য্য হারিয়ে যেতে চায় সবাই। অথৈই জলরাশির মাঝে ছুটে চলা নৌকা, আশ

ফামিওহার সংসার

কাজী সাহেব চশমা ফেলে এসেছেন। টিউব লাইটের আলোতেও পড়তে সমস্যা হচ্ছে। পাত্রের পাশে বসে নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু লিখতে পারছে না। বিবাহ নিবন্ধন খাতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। খুব কাছ থেকে দেখেও মনে হচ্ছে উনি তথ্য ভুল লিখবেন। ন্যাশনাল আইডি কার্ডের তের ডিজিট উনি বার ডিজিট লিখবেন। কাটাকাটি করে আবার লিখবেন। বিয়ের শুরুতেই কাটাকুটি হবে। নিশ্চয়ই শুভ লক্ষন না। কিন্তু এইসব ভেবে এখন কোন লাভ নেই। ফামিহা অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠেছে। এরপর থেকে ডেকেই যাচ্ছে। আজ শুক্রবার বলে একটু ঘুমাতে দিবে না। মিওহা বিরক্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠেই দেখে ফামিহা চা নিয়ে অপেক্ষা করছে। বারান্দায় বসে চা খাবে। বিয়ের পর থেকেই মিওহা স্বপ্ন দেখে আসছে ফামিহা চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে থেকে ডেকে তুলবে। এরপর মিওহা একটু আড়মোড় দিবে। উঠতে চাইবে না। কিন্তু আজ দেখি স্বপ্ন সত্যি হয়ে যাচ্ছে। উঠো তো... চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। মিওহা এক লাফে বিছানা থেকে নেম যায়। সে ভেবে পায় না এখন কি ফ্রেশ হয়ে চা খাবে নাকি বারান্দায় দাড়িয়ে চা খেয়ে ফ্রেশ হবে। শুধু তাকিয়ে আছে ফামিহার দিকে। যেন কি ঘটছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। সোনালী মিষ্টি রোদের আলোয় বারান্দাটায় চক

গ্র্যাজুয়েশন ভাইভা এবং 17th batch of Sociology, SUST

Image
চোখ ভিজে আসছে বার বার। বুকের ভিতরটা হু হু করে উঠছে। সবাইকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে। হৃদয়ের এ কোন অনুভুতি আজ আমাকে এত বিষন্ন করে তুলছে? চারটি বছর কি এতই কম সময়? শুরু হতেই শেষ। বড় হয়ে গেছি। যে চোখে থাকবে এখন জিজ্ঞাসা, জানার বিস্ময়, সুন্দর দেখার আগ্রহ, জীবনের জয়গান সে চোখে অশ্রু আজ নিজের কাছেই বেমানান লাগছে। তবুও কেন জানি বার বার মনে পড়ছে স্মৃতি, পুরানো সেই দিনের গান, আড্ডা, ক্লাশ ফাঁকি, সব কিছু-ই। গ্র্যাজুয়েট।  ২৭-০২-২০১৩ অনার্সের শেষ ভাইভা। সবাই অপেক্ষা করছে বিভাগীয় প্রধানের কক্ষের সামনে। টেনশনে এক একজন লাল-নীল-বেগুনী। হাতে বই খাতা। ডিপার্টমেন্টের সামনে হতে যাওয়া  সদ্য সমাজবিজ্ঞানীর ভিড়। আলোচনায় নতুন থিউরি না বের হলেও জনেক পাঁচ নিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ আলোচনা  চলছে করিডোরের এখানে সেখানে। আর আমি নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বন্ধুরা এমন সব টার্মের কথা বলছে মনে হচ্ছে আজই প্রথম শুনছি। হা হা হা... সব সময়ের মত এবারও ক্যামেরা সাথে নিতে ভুলে যাই নি। আর আজ শেষ ভাইভা। অনেকেই হয়তো সাথে থাকবে না। তাই এই বিষয়ে প্রস্তুতি বরাবরই আমার একটু বেশি। ডিপার্টমেন্ট এ গিয়ে দেখি লাল কভা

অপেক্ষা...

একা ভাল লাগছে না। অনেকক্ষন থেকেই তো অপেক্ষা করছি। আজ বুঝি সে আর আসবে না। পাঁচ টাকা করে মোট পনেরো টাকার বাদাম কিনে ফেলেছি। বাদামওয়ালা আশেপাশে ঘুরঘুর করছে আরো যদি পাঁচ টাকার বাদাম কিনে ফেলি। বহুবার বলেছি পাচটায় আসতে। সাতটায় টিউশনিতে যেতে হবে। মাসের শুরু। এখন মিস দিলে বেতন দেওয়ার সময় কেমন যেন একটা ভাব করে তাকায় মনে হয় সারামাস না পড়িয়েই বেতন নিতে আজ চলে এসেছি। এই জন্যই তো মাসের শেষ সপ্তাহে ইচ্ছে করেই চারদিন যাই আর মাসের শুরুতে সপ্তাহে ছয়দিন। ঘড়িতে ছয়টা পনেরো। এক ঘন্টা পনেরো মিনিট হয়ে গেছে একা বসে আছি। ওর সময় আমার জন্য যদি অপেক্ষা করতে হত তাহলে পনেরো মিনিট অপেক্ষা করেই চলে যেত। আর সে কি অভিমান। সে রাগ ভাঙ্গাতে আমাকে এই রকম প্রতিবার পনেরো মিনিট আগে এসে তার জন্য অপেক্ষা করতে হত। কিন্তু আজ এত সময় নিচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না। বাসা থেকে বের হতে না পারলে অন্তঃত একটা কল তো দিত। রিক্সা খুঁজে আসতে হলেও তো আধঘন্টার বেশি সময় লাগার কথা না। -মাম্মা আরো পাঁচ ট্যাকার বাদাম দিমু? নাকি এক্কেবারে দশ ট্যাকার লইয়া লইবেন? উনি আসলে তখন আমারে খুজলে পাইবেন না। - দূরে গিয়া মর। যাহ সামনে থেইক্কা! মেজাজ খারাপ

প্রানহীন পথচলা

একটা বসন্ত বাকী আছে।  এখনো কিছু স্বপ্ন রয়েছে। কিছুদূর আছে পথচলার বাকী। কিন্তু মন ক্রমশই প্রানহীন হয়ে পড়তে শুরু করেছে। যে পথ দিগন্তরেখায় মিশে অস্পষ্ট  ছিলো এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। তবে কি এই শীতে পাতা ঝরা রাস্তার পথে হেঁটে দিগন্তপাড়ি শেষ শীতের সময়গুলো? শীতের পরে যে বসন্ত সেটা তবে কি হবে নতুন করে ভালবেসে হারিয়ে যাবার জন্য শেষ প্রানের উচ্ছ্বাস? পথ চলতে চলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরে পা দিলাম। কিন্তু এই শেষ-কে মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। বন্ধুদের সাথে সেই আড্ডার জায়গা, প্রান খোলা হাসির সময়গুলো, স্যারদের স্নেহ, বাসের সিট সবকিছু। ব্যস্ততা বাড়ছে। জীবনের সব সুখের সময়গুলোর শেষের দিকে। এক্ষন শুধু অপেক্ষায় থাকা কবে ছেড়ে যাবো সবাইকে আর শুরু করবো এক নতুন প্রানহীন পথচলার।

চিঠি

সেদিন রাতে তোমাকে লিখা আমার চিঠিটার উত্তর আজও পাই নি। প্রতিদিন-ই ডাকবক্স দেখি কিন্তু শুন্য হাতে ঘরে ফিরে যাই। এখান থেকে ডাক অফিস বেশি দূরে নয়। আর প্রতিদিন-ই ভাবি কোন এক কাজের ফাঁকে খোঁজ নিয়ে আসবো আমার নামে কোন চিঠি এসেছে কিনা। আচ্ছা চিঠির উত্তর দিয়েছ তো? রাত অনেক হয়েছে। জেগে আছি। ঘরের আলো নিভিয়ে জাগতে ইচ্ছে করছে না বলে টেবিল ল্যম্পের আলোয় অন্ধকার ভাব দূর হচ্ছে। চিন্তার আরো গভীরে। প্রিয়, উত্তর দিতে দেরি হচ্ছে বলে কিছু মনে করছো না-তো? কি করবো বলো মা আমার সাথে রাত জেগে পাশে বসে থাকে। পড়ার বই-য়ে তাকিয়ে তোমার কথা ভাবি। কত কথা মনে আসে তোমাকে নিয়ে। অনেক কথা লিখে রাখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পারি না। তোমার চিঠি হেলাল ভাই যেদিন দিয়ে গেলো আমার মনে হলো হলুদ খামের ভিতর তুমি নিজেই চলে এসেছো। আনন্দে আত্মহারা হয়ে খোলা মাঠে ছুটেছি। তোমাকে নিয়ে কোথায় কোথায় যাব ভেবেছি। জমির মামার পুকুর ঘাটে বসে যখন তোমার চিঠি খুলে পড়তে শুরু করলাম মনে হচ্ছিল তুমি সামনে বসে আমাকে তোমার মনের কথা শুনিয়ে যাচ্ছো। কেমন আছো? অপেক্ষায় থেকে থেকে আমার সাথে রাগ করেছ বুঝি। রাগ করে না লক্ষী আমার। তোমাকে দেখার জন্যে, কছে পাওয়ার

একা আমার এই আমি

ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০০৯ ভারী কুয়াশার শীতের সকাল। মনটা ভীষন খারাপ করে বসে আছি আর কিছুক্ষন পর পর চোখের পানি মুছতেছি। খুব কষ্টের মাঝেও আনন্দ হচ্ছিল। তবে আনন্দ বা কষ্ট যাই ছিল সবকিছুর জন্য দোষ দিয়েছি আমার স্যার (খালেদ হাসান)-কে। তার জন্যই আমাকে গাজিপুর ছেড়ে সিলেট যেতে হবে। তিনি যদি ভর্তি করার জন্য এমন না করতেন তবে আজ ফ্যমিলির সাথে-ই গাজিপুর থাকতে পারতাম। কিন্তু পরে আদৌ কি কোথাও কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতাম কিনা জানি না। তাতে কি অন্তঃত গাজিপুরতো ছাড়তে হত না। এখন এসব ভেবে লাভ নেই তাই মনে যত কষ্ট আর ক্ষোভ থাকুক আমাকে সিলেট যেতেই হবে আর এখন আমার ব্যগ গোছাতে হবে। মা আর মারুফ ভাইয়া কি করছে কিছুতেই মনোযোগ নেই। বাবা মেসে থাকার জন্য নতুন বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, মশারি কিনে এনেছে। মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। এখন থেকে আমাকে একা থাকতে হবে, নিজে-কে নিয়ে খেতে হবে। মা আর রাত জেগে খাঁ খাঁ করবে না। আমিও আর এটা খাব না ওটা খাব না এমন করবো না। আবার চোখে পানি চলে এসে গেলো। রাতের ট্রেন উপবন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।। দুপুরে খেয়ে ঘুমাতে পারলাম না। কম্পিউটারে যত কষ্টের গান ছিল (মানে না মন বুঝে না ব্যথা...